শ্রী চিন্ময় পূর্ব বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) চট্টগ্রামের শাকপুরা গ্রামে ১৯৩১ সালে জন্ম গ্রহন করেন। সাত সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। বার বছর বয়সে ১৯৪৩ সালে মা বাবা উভয়কে হারানোর পরে শ্রী চিন্মময় দক্ষিন ভারতের পন্ডিচেরির শ্রী অরবিন্দের আশ্রমে যোগ দেন। এখানে তিনি জীবনের পরবর্তী কুড়ি বছর কাটান আধ্যাত্মিক সাধনাএ এবং তারই সাথে খেলাধুলো ও কবিতা, গান ও প্রবন্ধ রচনা তে।
শ্রী চিন্ময়ে কৈশোরেই মেডিটেশনের ক্ষেত্রে সুগভীর কিছু আত্মিক অনুভুতি পান এবং পরবর্তী কালে ধ্যানের সর্বোচ্চ অনুভুতিও তিনি লাভ করেন। পাশ্চাত্যের অকৃত্তিম সাধকদের সাথে তাঁর আধ্যাত্মিক জ্ঞ্যান ভাগ করার জন্যে তিনি ১৯৬৪ সালে নিউ এয়র্কে পাড়ি দেন।
শ্রী চিন্ময়ের মতে জীবনের সুগভীর ও উচ্চ আদর্শের জন্যে হৃদয়ের আকুতিই হচ্ছে যেকোন ক্ষেত্রে – ধর্ম, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, বিজ্ঞ্যান ইত্যাদিতে অগ্রসর হওয়ার আধ্যাত্মিক শক্তি। যদি কেউ আন্তরিকভাবে যেকোন বিষয়ে নিজের সীমা অতিক্রমের জন্যে উদ্যোগী হয় তাহলে অবশ্যই সে নিজের ভেতরের সুপ্ত শক্তিকে সফল ভাবে বিকশিত করে নিতে পারে এবং সত্যিকার আত্মতৃপ্তি পেতে পারে। তাঁর নিজের ভাষায়:
“আমাদের লক্ষ্য হচ্চে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর এবং উজ্জ্বলতম পৌঁছানো; এবং উচ্চ থেকে উচ্চতর এবং সর্বোচ্চ পৌঁছানো। এমনকি সর্বোচ্চ পর্যায়েও আমাদের কোন বিরতি নেই কারণ আমাদের প্রত্যেকের ভেতরেই রয়েছেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা যিনি প্রতি মুহুর্তেই তাঁর নিজস্ব বাস্তবতাকে বিকশিত করছেন।"
বিশ্বের ৬০টির বেশি দেশের মানুষের কাছে তাদের আধ্যাত্মিক পথদর্শক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ সমকালীন জীবনের গতিশীলতার ভেতরে থেকেই ভারসাম্যপূর্ণ জীবন পরিচলনায় তিনি প্রেরণা দেন।বিশ্বের ৬০টির বেশি দেশের মানুষের কাছে তাদের আধ্যাত্মিক পথদর্শক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ সমকালীন জীবনের গতিশীলতার ভেতরে থেকেই ভারসাম্যপূর্ণ জীবন পরিচলনায় তিনি প্রেরণা দেন।
শ্রী চিন্ময়ের জীবন ছিল সীমাহীন সৃজনশীলতার এক মূর্ত প্রতীক। সংগীত, কাব্য, চিত্রকলা, সাহিত্য এবং ক্রীড়ার মত জ্ঞ্যান ও কর্মের বিস্তৃত সব ক্ষেত্রে তিনি বিপুল সৃষ্টির সাক্ষর রেখে গেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর রয়েছে সুদূর প্রসারী ও বিস্ময়কার সব কীর্তি।
তাঁর ছাত্র ও অনুসারিদের সাথে মিলিত হতে, বিশ্বের ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে বিশ্বশান্তি ও আধ্যাত্মিক আলোচনার জন্যে ও সংগীতের কন্সার্ট বতৃতা, সার্বজনীন ধ্যান সভা করার জন্যে শ্রী চিন্ময় প্রায়ই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেতেন। শ্রী চিন্ময় কখনোই তাঁর আধ্যাত্মিক বক্তব্য, সংগীত কনসার্ট বা ধ্যান সভার জন্য অর্থ গ্রহন করতেননা।
শ্রী চিন্ময় ২০০৭ সালের ১১ই অক্টবর সকালে তিরোধান লাভ করেন।